শ্রেণিকক্ষের অভাবে পাঠদান ব্যাহত

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নেই ভবনের চাকচিক্য, আবার নেই আসবাবের বাহুল্যও, দীনতার ছাপ যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাইছে। একটিমাত্র পাকা ভবন, তারও চুন-সুড়কি উঠে লোহার রড হা করে আছে। বাকি যা আছে সবই মরিচা ধরা, টিনের বেড়ার ঘর। শেয়াল-কুকুর একদিকে ঢুকে আরেকদিকে বেরিয়ে যায় অনায়াসে। এমনই যখন করুণ অবস্থা সেই প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮ সালে উপকূলীয় জেলা বরগুনার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানের পদক অর্জন করে অন্যদের তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এটা আমতলীর ঘটখালী আবাসিক আমিন উদ্দিন মহিলা আলিম মাদরাসার কথা।

আমতলী-পটুয়াখালী পাকা সড়ক থেকে একটি সরু সড়ক হয়ে গুলিশাখালী ইউনিয়নের খেকুয়ানী বাজারে যাওয়ার পথের উত্তর পাশে পূর্বমুখী একটি একতলা একাডেমিক ভবন মাদরাসা। ২০০০ সালে নির্মিত এই ভবনটিই একমাত্র পাকা ঘর। যেখানে শিক্ষার্থীদের জটলা। মাঠে পা দিয়ে জানা গেল শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে দাখিল ও আলিম পরীক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে হচ্ছে পালাক্রমে। শিক্ষার্থীরা কিছুটা আক্ষেপের সুরে বললেন, অনেকে এসে ছবি করে নিয়ে গেছেন। কিন্তু আমাদের কষ্ট দূর হয়নি।

আমাদের শ্রেণিকক্ষ নেই। আবার বেঞ্চও নেই। যেখানে বসে ক্লাস করতে পারি। অধ্যক্ষ মাওলানা মো. আব্দুস সালাম বলেন, একাডেমিক ভবনে তিনটি রুম রয়েছে। এক রুমে অধ্যক্ষ ও অন্যান্য শিক্ষক, এরপর কম্পিউটার ল্যাব, তৃতীয় রুমে আলিম শ্রেণির ক্লাস নেয়া হয়। একাডেমিক ভবনের সঙ্গে একটি উত্তরে ও পশ্চিম পাশে তিনটি টিনসেড ঘর রয়েছে। টিনের বেড়ার বেহাল অবস্থা। এখানে কোনো মানুষ থাকে-দূর থেকে এটা অনুমান করাও কঠিন। দেখলেই পরিত্যক্ত কোনো ভবন বলে মনে হবে। এগুলোতে বিভিন্ন শ্রেণির ক্লাস চলে ও আবাসিক ছাত্রীরা থাকেন। কিন্তু রোদে বেড়া ও ছাউনির টিন এত গরম হয় যে ফ্যান থাকলেও কক্ষের মধ্যে থাকা কষ্টকর হয়।

বিশেষ করে গরমের সময়ে এই রুমগুলোতে দম বন্ধ হয়ে আসার মতো অবস্থা হয় বলে জানালেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এমনই দীনতার মধ্যে চলমান মাদরাসাটি  ফলাফলে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। গত বছর জেডিসি পরীক্ষায়  ৬৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শতভাগ পাস ও দাখিল পরীক্ষায় ৩৩ জন অংশগ্রহণ করে শতভাগ পাস করে। আলিম পরীক্ষায় ২২ জন অংশগ্রহণ করে সেখানেও শতভাগ পাসের রেকর্ড। শুধু ২০১৮ সালেই নয় মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই  উপজেলা ও জেলার মধ্যে ভালো ফলাফল করে আসছে। আরো অনেকগুলো ক্যাটাগরিতে অন্যদের টেক্কা দিয়ে বছরের শ্রেষ্ঠ উপজেলা ও জেলার পদক ছিনিয়ে এনেছে।

শুধুই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অদম্য মনোবল। এবারো তারা ভালো ফল অর্জনের জন্য  জেডিসি, দাখিল, আলিম পরীক্ষার্থীদের দিনরাতে বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করেছে। ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসাটিতে  বর্তমানে ৬৭৫ জন শিক্ষার্থী  অধ্যয়ন করছে। কাছাকাছি কোনো মাদরাসা না থাকায় শিক্ষার্থীদের কাছে মাদরাসাটি অন্ধের যষ্টির মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষকরা ভবনের জন্য অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। আশা করছেন তাদের দুঃখের দিনের সমাপ্তি ঘটবে। ১৯৮৪ সালে চওড়া ইউপির ঘটখালী গ্রামের বিশিষ্ট সমাজসেবক আমিন উদ্দিন সিকদার মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। ১/০৩/১৯৮৭ সালে মাদরাসটি এমপিওভুক্ত হয়।

মাদরাসায় ২৬ জন শিক্ষক কর্মচারী ও ইবতেদায়ী ১ম শ্রেণি থেকে আলিম পর্যন্ত ৬৭৫ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। এর মধ্যে আলিম শাখার ৬ জন শিক্ষক এমপিওভুক্ত হয়নি। তারা বর্তমানে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এলাকার সাধারণ জনগণ এ মাদরাসাটিকে উপকূলের ইসলামী নারী জাগরণের অগ্রদূত প্রতিষ্ঠান বলেন। মাদরাসার অধ্যক্ষ আলহাজ মাওলানা মো. আব্দুস সালাম বলেন, অনেক কষ্ট করে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে হয়। মাদরাসায় ৩/৪টি ভবন প্রয়োজন।

তিনি আরো জানান, আমতলী উপজেলার মধ্যে এ মাদরাসায় বিজ্ঞান শাখা চালু রয়েছে। শিক্ষকরা ভবনের জন্য অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। নারী শিক্ষার জন্য মাদরাসায় ভবন নির্মাণের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন। আমতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আকমল হোসেন বলেন নারী শিক্ষায় প্রতিষ্ঠানটি এলাকায় ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। মাদরাসায় ভবনের খুব প্রয়োজন বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর